এক বোন প্রশ্ন করলেন, “পর্বতারোহী হওয়ার যোগ্যতা কি? বা কাদের পর্বতারোহী বলা যায়”? এই প্রশ্নের উত্তর অনেক সহজ এবং পরিষ্কার।

আমার উত্তর ছিল এরকম, সহজ কথায় পর্বতারোহণ যারা করেন তারাই পর্বতারোহী। তবে পর্বতারোহী হতে হলে কিছু যোগ্যতা তো অবশ্যই প্রয়োজন। পর্বতারোহণের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান পরিপূর্ণ ভাবে গ্রহণ করে যারা পর্বতারোহণ করেন তারাই পর্বতারোহী।

– এখন প্রশ্ন হচ্ছে পরিপূর্ণ জ্ঞান কোনটা? এর উত্তরও সহজ।

পর্বতে আরোহণের জন্য যেই যেই জ্ঞান থাকা জরুরী সেগুলো। যেমন বিভিন্ন টার্ম সম্পর্কে ধারণা, রক এবং আইসের পথ গুলো নিরাপদে অতিক্রম করার ধারণা, ইকুইপমেন্ট সম্পর্কে ধারণা এবং তার সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে অবগত থাকা, পাহাড়ের কাপড়, ক্যাম্পিং সরঞ্জাম, আবহাওয়া, বিভিন্ন রকমের বিপদ এবং বিপদ থেকে উদ্ধার বা পূর্ব ব্যবস্থাপনা বিষয় গুলো সহ আরো অনেক বিষয় আছে যেগুলো পর্বতারোহণের জন্য জানা অনেক জরুরী।

এবার আসি আসল কথায় – এই জ্ঞান গুলো আমরা ভিন্ন ভিন্ন ভাবে পেতে পারি। কোন প্রতিষ্ঠিত ইন্সটিটিউট থেকে শিক্ষা নিতে পারি আবার এমন কোন পর্বতারোহীর কাছ থেকে নিতে পারি যিনি এই সব কিছু পরিপূর্ণ ভাবে জানেন, এছাড়াও বই পড়ে বা ভিডিও দেখেও আমরা শিখতে পারি। প্রতিষ্ঠিত ইন্সটিটিউটের প্রশিক্ষণ গুলো সাজানো হয়  থিওরি এবং প্রাক্টিক্যাল মিলিয়ে। তাই তাত্ত্বিক জ্ঞানের পাশাপাশি আপনারা ব্যবহারীক জ্ঞানও পেয়ে যাবেন। তেমনি অনেক পর্বতারোহী আছেন যারা ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে সেই শিক্ষা গ্রহণ করে পর্বতারোহণে সেই শিক্ষা গুলো ব্যবহার করে থাকেন। অনেকে নিজে নিজে অনেকবার যেয়ে যেয়ে প্রাক্টিস করে করে নিজেকে অভিজ্ঞ বানায় এবং কারো কারো ক্ষেত্রে অভিযানে থাকা শেরপা, গাইড অথবা অভিজ্ঞ কারো তত্ত্বাবধায়ণে চর্চা করে শিখে।

 

সংক্ষেপে বলতে গেলে এভাবে বলতে হয়, “পর্বতারোহণ বিষয়ে সঠিক ধারণা নিয়ে যারা পর্বতারোহণ করেন তারাই পর্বতারোহী” এর সাথে আরো কিছু বিষয় যুক্ত করতে হবে নয়তো কিছুটা ঘোলাটে রয়ে যাবে। সঠিক ধারণা কোথা থেকে নিতে হবে? বই থেকে বিভিন্ন পর্বতারোহীদের অভিজ্ঞতা থেকে এবং সেই সকল ধারণা পর্বতে ব্যবহার করে এবং নিয়মিত চর্চা করে। চর্চা ছাড়া কেউই কোন কাজে বেশি দিন পারদর্শী থাকতে পারে না। তাই পর্বতারোহীদের নিয়মিত পাহাড়ে যেতে হবে এবং পর্বতারোহণ চর্চা করতে হবে।

তাহলে বুঝতেই পারছেন পর্বতারোহী হতে হলে কোন প্রাতিষ্ঠানিক সার্টিফিকেট জরুরী নয়। প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ ছাড়াও প্রশিক্ষণ নেয়া যায়। প্রতিষ্ঠানে যেটা হয়, সিলেবাস এর মাধ্যমে হাতে কলমে সব বিষয়ে শিখিয়ে দেয়া হয়। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে রক ক্লাইম্বিং শেখায় রক ওয়ালে এবং আইস ক্লাইম্বিং শেখায় গ্লেশিয়ারে। মোট কথা পর্বতারোহণের প্রায় সকল জ্ঞানই অল্প অল্প করে হাতে কলমে শেখানো হয় কোর্স গুলোতে।

আমি যখন পর্বতারোহণে নতুন তখন বেসিক পর্বতারোহণ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত একজন বড় ভাই বলতেন, বেসিক না করলে কেউ পর্বতারোহণের কিছু জানে না! যখন বেসিক করে তার সামনে গেলাম! (তখন সে এডভান্স কোর্স করে ফেলেছেন)  তখন তার কথা, বেসিকতো কিছুই না, আসল হচ্ছে এডভান্স ট্রেনিং। এরপরে আমি এডভান্স এবং পর্বতারোহণ বিষয়ে প্রশিক্ষক হওয়ার প্রশিক্ষণ নিয়ে তার সামনে গিয়েছি। তারপরেও তিনি আমার মধ্যে কোন না কোন  সমস্যা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছিলেন। এইযে আমরা ঝর্ণায় বা গাছে এসেন্ডিং ডিসেন্ডিং করি, এটা নিয়ে তার আপত্তি। এটা নাকি সরঞ্জামের অপমান! যেই সরঞ্জাম যেখানের জন্য তৈরী সেটা নাকি সেখানেই ব্যবহার করতে হয়!!! ওনার কথা গুলো আপনাদের কাছে আজব লাগছে না? আমার কাছে একেবারেই বাচ্চাসুলভ আচরণ মনে হয়েছে। ওনার কথা কিভাবে আপনি মূল্যায়ন করবেন? উনার কথার উপর ভিত্তি করে কি আপনি সকল বেসিক প্রশিক্ষণ প্রাপ্তদের মূল্যায়ন করবেন? আমিতো করবো না! 

বর্তমানে অনেকেই প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত পর্বতারোহী এবং প্রশিক্ষণ ছাড়া পর্বতারোহী নিয়ে উল্টাপাল্টা আলোচনা

 করছেন যা থেকে নতুন নতুন আগ্রহীরা বিভ্রান্তির মধ্যে পরছে। এগুলো দয়াকরে বন্ধ করেন। কারা সেরা এটা নিয়ে পরিবেশ নোংরা করার চেষ্টা আর ছোট্ট কমিউনিটির মধ্যে একজনের পিছনে আরেকজনকে লাগিয়ে দেয়ার চেষ্টা বন্ধ করুন। এতে করে কারো উপকার হচ্ছে না বরং সমাজের অপকার হচ্ছে। যারা এই নোংরামি করছে তাদেরও দোষ দিতে পারছি না, কারণ আজ পর্যন্ত বাংলাদেশে আমরা কোন সংগঠিত প্লাটফর্ম করতে পারি নাই যেখানে এই সকল বিষয় নিয়ে সুস্থ আলোচনা সমালোচনা হতে পারে। তাই যার যা ইচ্ছে যেভাবে ইচ্ছে বলে যাচ্ছে এবং আমরা সকলে সেটা শুনতে বাধ্য হচ্ছি। কারণ ময়লা ঘাটলে সেটা আমার গায়েই লাগবে এবং গন্ধ ছড়াবে। আমরা কেউই সেই গন্ধ নিজের গায়ে নিতে চাই না এবং পরিষ্কার করার চেষ্টা ও করি না। এভাবে চলতে থাকলে একদিন সব দিকে শুধু ময়লাই দেখা যাবে।

যারা আপনারা বাংলাদেশে পর্বতারোহণের সুন্দর ভবিষ্যৎ চান তারা অনুগ্রহ করে এক হয়ে একটা প্লাটফর্ম তৈরী করুন যেখানে আমরা পর্বতারোহণ নিয়ে সুস্থ আলোচনা এবং সমালোচনা করবো। অল্প কয়েকজন মানুষের জন্য বাংলাদেশের পর্বতারোহণকে কলুষিত করবেন না। যতটুকু কলুষিত হয়েছে আসুন আমরা ভাল ভাল কিছু সাফল্য দিয়ে সেগুলো আড়ালে ঢেকে দেই।