প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে মাত্র ২৭ দিনে নেপালের হিমালয়ের ৩টি ৬০০০ মিটার পর্বত চূড়া স্পর্শ করলেন আহসানুজ্জামান তৌকির। তার এই অভিযানের নাম ছিলো “THREE PEAK IN A ROW” এই অভিযানের পৃষ্ঠপোষকতায় ছিলো রোপফোর আউটডোর এডুকেশন।

চলনবিলের কোল ঘেঁষা চাটমোহরের পৌরসদরে বেড়ে উঠা এই তরুণ পেশায় একজন প্রকৌশলী হলেও, পর্বতারোহণ হল তার নেশা, এবং ইতিমধ্যেই সে অর্জন করেছে বেশ কিছু সফলতা। তরুণ এই পর্বতারোহী, গত তিন বছরে হিমালয়ের ৩ টি ৬০০০ মিটার পর্বতের চূড়ায়, পাঁচবার বাংলাদেশের পতাকা তুলে ধরেছেন এবং সন্মানিত করেছেন মাতৃভূমি ও নিজ জন্মস্থানকেও।

বাংলাদেশ থেকে গত ০৪ অক্টোবর নেপালের উদ্দেশ্য যাত্রা শুরু করেন তৌকির। কাঠমান্ডুতে ২ দিনের অভিযান প্রস্তুতি শেষে চলে যান এভারেস্ট রিজিওনের খুম্বু ভ্যালীতে, টানা ৫ দিন ট্রেকিং শেষে ১১ অক্টোবর পৌঁছান ডিংবোচে গ্রামে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথমে তার আইল্যান্ড পিক (৬১৬৫ মি:) অভিযানের কথা থাকলেও টীম লিডার মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে ১২ অক্টোবর, লবুচে পিক অভিযানে যান তৌকির। সিদ্ধান্ত নেন কোন শেরপা সাপোর্ট ছাড়াই একা ক্লাইম্ব করবেন ৬১১৯ মিটারের লবুচে পিক। ১২ অক্টোবর সকালে প্রয়োজনীয় ক্লাইম্বিং ইকুইপমেন্ট নিতে চলে যান ডিংবোচে থেকে ৪.৫ কিলোমিটার দূরের চোখুং গ্রামে, সেখান থেকে শুরু করেন ১৩ কিলোমিটার দূরের লবুচে হাই ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে যাত্রা। বিকালে লবুচে হাই ক্যাম্প পৌঁছে কিছু টা বিশ্রাম নিয়ে, স্থানীয় সময় রাত ২ টা ২০ মিনিটে সামিট পুশ করেন এবং সকাল ৭ টা ৩৬ মিনিটে পা রাখেন লবুচে ইস্ট পর্বত চূড়ায়, তুলে ধরনের বাংলাদেশের পতাকা। প্রথম বাংলাদেশী হিসাবে কোন শেরপা সাপোর্ট ছাড়াই তিনি এই পর্বত অভিযান শেষ করেন।

রপর তিনি দলের সাথে চলে যান এভারেস্ট বেস ক্যাম্প সেখান থেকে আবার ফিরে আসেন আইল্যান্ড পিক ভিলেজ ক্যাম্প ক্ষ্যাত চোখুং এ। প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শেষে ১৭ ই অক্টোবর যাত্রা শুরু করেন আইল্যান্ড পিক বেস ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে, দুপুরে বেস ক্যাম্পে পৌঁছে দুপুরের খাবার খেয়ে টীমমেটদের প্রশিক্ষণ দেন অ্যাসেন্ডিং এবং ডিসেন্ডিং কৌশলের। এরপর রাত ০১:০৪ মিনিটে সামিট পুশ করেন, প্রচন্ড ঝড়ো হাওয়া, একটু পর পর তুষারপাত এবং ফিক্সড রোপে প্রচুর ট্রাফিক পেরিয়ে ১৮ অক্টোবর সকাল ০৯:৫৪ মিনিটে, অভিযানের দলনেতা হিসাবে আইল্যান্ড পিক (৬১৬৫ মিটার) এর চূড়ায় লাল-সবুজের পতাকা উড়ান। সফল সামিট শেষে ফিরে আসেন চোখুং এ, এরপর নেমে আসেন শেরপা রাজধানী নামচে বাজারে হয়ে লুকলা গ্রামে, সেখান থেকে শুরু হয় তার তৃতীয় অভিযানের প্রস্তুতি। খুম্বু ভ্যালী ছেড়ে এবার তিনি যাত্রা শুরু করেন হিংকু ভ্যালীর দিকে। টানা ৭ দিন মাকালু-বারুনসে ফরেস্ট ট্রেকিং শেষে ২৭ অক্টোবর হিংকু নদীর উৎপত্তি স্থল পেরেয়ি শেষ গ্রাম ‘খারে’ তে পৌছান তিনি। সকল ইকুইপমেন্ট চেক এবং প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শেষে ২৯ অক্টোবর মেরা পিক হাই ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে বিকালে হাই ক্যাম্পে পৌঁছান, কিছুটা বিশ্রাম শেষে রাত ০২:০৮ মিনিটে সামিট পুশ করেন এবং ৩০ অক্টোবর সকাল ০৭:৩৬ মিনিটে তিনি সহ তার পুরো টীম মেরা পিক (৬৪৬১ মিটার) সামিট করেন এবং মেলে ধরনেন লাল-সবুজের পতাকা। উল্লেক্ষ্য যে এই অভিযানেও তৌকিরের জন্য আলাদাভাবে কোন শেরপা প্রয়োজন হয়নি।

এই অর্জন নিয়ে তার অনুভূতি জানতে চাইলে সে জানায়, হিমালয়ে সব গুলো পর্বত অভিযান ই কষ্টসাধ্যের এবং ব্যয়বহুল। প্রচন্ড ঠান্ডা এবং ঝুকিপূর্ণ ক্লাইম্বি শেষে যখন নিজ দেশেরর লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়েছি, সব কষ্ট নিমিষেই আনন্দে রুপান্তরিত হয়ে গেছে। ধন্যবাদ দিতে চাই রোপফোর আউটডোর এডুকেশন কে যার পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এই অভিযান সফল হতো না। বিশেষ করে রোপফোরের দুই প্রতিষ্ঠাতা মারুফা হক এবং মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, যাদের নিরলস প্রচেষ্টায় সব কিছু আরো সহজ হয়েছে।

তরুণ এই পর্বতারোহীর এবারের পরিকল্পনা এভারেস্ট নিয়ে, এর জন্য প্রয়োজন পৃষ্ঠপোষকতা, সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তার সামনের এই অভিযান গুলো আরো সহজ হবে।

সপ্নবাজ এই তরুণ এখন নেপালে অবস্থান করছে আরো একটি প্রশিক্ষণ অভিযানের জন্য। অভিযান শেষে আগামী ১৬ নভেম্বর তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।