ঈর্ষা কোনো মানসিক রোগ নয়, ঈর্ষা একটি খুব স্বাভাবিক অনুভূতি। ঈর্ষান্বিত বোধ করাকে এড়িয়ে যাবার পরিবর্তে, একে বোঝার চেষ্টা করুন। আমরা যখন ঈর্ষান্বিত না হওয়ার ভাব করি, তখন এর তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। এজন্য, আমাদের নিজেকে চেনা এবং অসামঞ্জস্যতাগুলোকে জানা প্রয়োজন! আমাদের পরিচিত কোন মানুষ ঈর্ষান্বিত কিনা তা চিহ্নিত করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই মানুষগুলো আমাদের ব্যক্তিগত এবং পেশাগত জীবনে অনেকভাবে ক্ষতি করতে পারে…
কিভাবে বুঝবেন যে কেউ আপনাকে গোপনে ঈর্ষা করছে?
এই মানুষগুলো সবসময় আপনাকে প্রশংসা করবে কিঞ্চিৎ অপমানের সাথে। আপনি একটু খেয়াল করলেই বুঝতে পারবেন, এদের মূল হাতিয়ার হল প্রশংসা এবং কথার ছলে আক্রমণ! আপনি লক্ষ্যভ্রষ্ট হলেই ঈর্ষান্বিত মানুষটি সর্বদা খুশি হবে। আপনার বিপত্তির সংবাদ তাদের যে গোপনে আনন্দ দিচ্ছে তা তারা আপনাকে কখনই বুঝতে দেবে না, কিন্তু বারবার আপনাকে মনে করিয়ে দেবে যে আপনই অকৃতকার্য হয়েছেন!
এই মানুষগুলো সবসময় আপনার সাফল্যকে ছোট করে দেখবে এবং সবার সামনে ছোট করে উপস্থাপনের চেষ্টা করবে। আপনার ব্যক্তিগত অর্জন থেকে তার অর্জন কম বলেই তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে আর অন্যদের বোঝানোর চেষ্টা করবে যে আপনি যথেষ্ট ভাল নন।
যখন কেউ ঈর্ষান্বিত হয় তখন তাদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করার প্রবল প্রয়োজন থাকে, ফলস্বরূপ, তারা অতিরিক্ত প্রতিযোগিতামূলক হয়ে থাকে। কিছু ত্যাগ স্বীকার করে হলেও আপনার সাথে পরিচয় আছে এমন কিছু মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করবে, অথবা কিছু মানুষকে নিয়ে একটা দল তৈরি করবে, শুধু মুখে মুখেই, সকলের অনেক উপকার করার কথা বলবে, সর্বপরি, নিজের একটা গ্রহণযোগ্যতা বানানোর চেষ্টা করবে। এতে করে, এরা যখন কারো সম্পর্কে খারাপ বলে, তখন সবাই সেটা গ্রহণ করতে বাধ্য হয়।
কাজের ক্ষেত্রে বা সিদ্ধান্তে কোন ভুল হলে আপনার পরিচিত ঈর্ষান্বিত মানুষটি আপনাকে বলবে, “আমি আগেই বলেছিলাম…” আপনার ব্যর্থতায় তারা অনেক খুশি হবে। অগোচরে অন্য মানুষের সামনে আপনার ভুলগুলো আলোচনা করতে এরা অনেক পছন্দ করে, এমনকি আপনি এদের কাছ থেকেই জানতে পারবেন যে, কে আপনাকে নিয়ে কি বলেছে অথবা অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। আপনি যদি জানতে চান যে কেন সেই ব্যক্তি তার সামনেই আপনার নামে কিছু বলেছে, অথবা বলেতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেছে? দেখবেন, নিশ্চিত আমতা আমতা শুরু করে দিবে, কারণ এই ধরনের আলোচলার শুরু সাধারণত ঈর্ষান্বিত ব্যাক্তিটিই শুরু করে! এ ধরনের অনুভূতি অনেক বেশী অপছন্দের কারণে শুরু হয়, বিশেষ করে, যদি আপনি এমন কিছু অর্জন করেন যা তারা সর্বদা নিজের জন্য চেয়েছিল, কিন্তু পারেনি।
এবার বলি আশার কথা… ঈর্ষা কোনো মানসিক রোগ নয়। তবে, নিঃসন্দেহে এটি একটি বিষাক্ত এবং ধ্বংসাত্মক অনুভূতি! এই অনুভূতি মানুষের আত্মসম্মানকে প্রভাবিত করে সম্পর্ক নষ্ট করে দেয়। এজন্যই একটা নির্দিষ্ট সময় পর পর এই মানুষগুলো নিতান্তই একা, ভীষণ রকমের একা এবং ভয়ংকর নিঃসঙ্গ!
একমাত্র নিজস্ব অন্তর্দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেই এই ঈর্ষা নামক ক্ষতিকারক স্বভাব থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। শেক্সপিয়রের ওথেলো নাটকের সবুজ চোখের দানব রুপি হিংসুক আইয়াগো আমাদের আশেপাশেই ঘুরে বেড়াচ্ছে আর নিঃশব্দে ক্ষতি করে যাচ্ছে…, ঈর্ষান্বিত ব্যক্তি অন্যের ক্ষতি করে সাময়িক শান্তি পেলেও, নিজের জন্য কি পরিমাণ শারীরিক আর মানসিক চিরস্থায়ী ব্যাধি ডেকে আনছে, তা পরের লিখায় আলোচনা করবো…
Selfcare is a reflection of maturity | ইয়ালা ডায়েরী – পর্ব ১ | Why prioritizing your Mental Health?
Leave A Comment